প্রকল্পের নাম: “লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা নামক স্থানে তিস্তা নদীর বামতীর সংরক্ষণ কাজ”
উদ্দেশ্য:
লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলাধীন মহিষখোচা ইউনিয়নের প্রস্তাবিত এলাকাকে তিস্তা নদীর বামতীরের ভাঙ্গন হতে রক্ষা করা।
তিস্তা নদীর বামতীরে ২.৪৫০ কিঃমিঃ নদী তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ২টি স্পারসহ নদীর তীরের ভাঙ্গন রোধ করা।
২৫০১৫.০০ লক্ষ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষার মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত (প্রায় ৫০.০০ হাজার) জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ও পরিবেশগত উন্নতি সাধন করা।
প্রকল্প ব্যয়: ৪৯৩৪.৯৫ লক্ষ টাকা।
প্রকল্পের মেয়াদকাল: জানুয়ারী, ২০২২ খ্রিঃ হতে জুন, ২০২৪ খ্রিঃ
প্রধান প্রধান কার্যক্রম:
নদী তীর সংরক্ষণ = ২.৪৫০ কিঃমিঃ
প্রকল্পের পটভূমি (সংক্ষিপ্ত)
তিস্তা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তিস্তা নদীটি নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী নদী বন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তিস্তা নদীর সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৩১৫.০০ কিমি, তার মধ্যে ১১৫.০০ কিমি বাংলাদেশ ভূখন্ডে অবস্থিত। তিস্তা খরস্রোতা ও পাহাড়ী নদী হওয়ায় প্রচুর পরিমানে পলি বহন করে। যা ডুব চরের সৃষ্টি করে নদীর গতিপথ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করে। ফলে তিস্তা নদীর বামতীরে ব্যাপক আকারে নদী ভাঙ্গন দেখা দেয় যা প্রতিবছর অব্যাহত আছে। বিগত ২০০৩-২০০৫ সালে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলাধীন মহিষখোচা ইউনিয়নের চন্ডিমারী নামক স্থানে “তিস্তা নদীর বামতীর সংরক্ষণ (তিস্তা রেলওয়ে ব্রীজ হতে চন্ডিমারী পর্যন্ত) প্রকল্প” এর আওতায় তিস্তা নদীর বামতীরের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের কিঃমিঃ ১৮.৮৯০ তে প্রায় ৫.০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৪১০.০০ মিটার দৈর্ঘ্যের (মাটির শ্যাংক=১৩১১.০০ মিটার, আরসিসি অংশ = ৯৯.০০ মিটার) চন্ডিমারী স্পার-১ এবং মহিষখোচা নামক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের কিঃমিঃ ১৫.১৯০ তে প্রায় ৫.০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১০৯৮.০০ মিটার দৈর্ঘ্যের (মাটির শ্যাংক=৯৯৯.০০ মিটার, আরসিসি অংশ = ৯৯.০০ মিটার) মহিষখোচা স্পার-২ নির্মাণ করা হয়। আদিতমারী উপজেলায় তিস্তা নদীর বামতীরে স্পার ২ টির মধ্যবর্তী দূরত্ব ৩.৭০ কিঃমিঃ।
স্পার দুটি নির্মানের সময় কিংবা ২০১১ সাল পর্যন্ত নদীর গতি প্রবাহ স্পারের ধারনা অনুযায়ী কাজ করে ফলে মধ্যবর্তী স্থানে কোন নদী ভাংগন সমস্যা দেখা দেয়নি। ২০১১ সালের বন্যা ও পরবর্তী সময়ে নদীর মরফোলজিক্যাল পরিবর্তন ঘটে এবং দুই স্পারের মধ্যবর্তী স্থানে নদীর প্রবাহ প্রায় লম্বভাবে তীরে আঘাত হানতে থাকে। নদীর মরফোলজিক্যাল পরিবর্তনের কারনে স্পার ২ টির নকশা প্রনয়নকালে যে ধারনা করা হয়েছিল বাস্তবে তার কার্যকারীতা হারিয়ে ফেলে এবং ব্যপক নদী ভাংগন সংঘটিত হয়। গুগল স্যাটেলাইট ইমেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, গত ২০১৪ সাল হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৯০০.০০ মিটার পর্যন্ত ব্যাংক লাইন শিফট হয়েছে এবং শুধুমাত্র ২০২০ সালেই ৩০০.০০ মিটার পর্যন্ত ব্যাংক লাইন শিফট হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মাননীয় সংসদ সদস্য এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানটি স্থায়ীভাবে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করেন।
বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে মহিষখোচা ইউনিয়নের ২ স্পারের মধ্যবর্তী স্থানে ভাংগন রোধ কল্পে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২.০০ কিঃমিঃ স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষা কাজের জন্য প্রায় ৬২.০০ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা বোর্ডে প্রেরণ করা হয় পরবর্তীতে বর্নিত কাজের জন্য বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাবনাটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। এই কাজের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ বরাদ্দের সংস্থান করতে না পাড়ায় একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা(ডিপিপি) দ্রুত প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের নির্দেশনা পাওয়া যায়।
বর্নিত স্থানটি রক্ষার্থে তৎকালীন মাননীয় সংসদ সদস্য ১৭-লালমনিরহাট-২ ও মাননীয় মন্ত্রী, সমাজ কল্যান মন্ত্রণালয় জনাব নুরুজ্জামান আহম্মেদ একাধিকবার মোবাইল ফোনে নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং প্রধান প্রকৌশলী, উত্তরাঞ্চল কে নির্দেশনা প্রদান করেন। সিনিয়র সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় জনাব কবীর বিন আনোয়ার গত ১২/০৮/২০১৯ খ্রিঃ তারিখে স্থানটি পরিদর্শন করে দ্রুত স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়নের আশ্বাস প্রদান করেন। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী জনাব একেএম এনামুল হক শামীম মহোদয় গত ০৮/০৭/২০২০ খ্রিঃ তারিখে মহিষখোচা নামক স্থানটি রক্ষায় একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা(ডিপিপি) প্রনয়নের জন্য নির্বাহী প্রকৌশরীকে নির্দেশ প্রদান করেন।
বর্নিত এলাকাটিতে ব্যাপক নদী ভাংগনের খবর বিভিন্ন পত্রিকা এবং স্যাটেলাইট চ্যনেলে প্রচারিত হওয়ায় বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিবেচনা করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কর্নেল(অবঃ) জাহিদ ফারুক মহোদয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(উন্নয়ন), মহাপরিচালক, বাপাউবো মহোদয়সহ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন গত ২৬/০৯/২০২০ খ্রিঃ তারিখে মহিষখোচা নামক স্থানটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন কালে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় মহোদয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রকল্প প্রস্তাবনা দ্রুত পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরনের নির্দেশ প্রদান করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক যথাযথ যাচাই পূর্বক পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় কর্তৃক গত ১০/০২/২০২২ খ্রিঃ তারিখে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। গত ১৪/০২/২০২২ খ্রিঃ তারিখে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকল্পের সরকারী আদেশ জারী করা হয় এবং গত ২৪/০২/২০২২ খ্রিঃ তারিখে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রশাসনিক আদেশ জারী করা হয়।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS